কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৬ নভেম্বর) :: ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় কক্সবাজার জেলায় কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা। গত বছর যেখানে পাশের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। যা এবার ৪.৫৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৭০.৩৮% । গেলবার জিপিএ-৫ যেখানে ৭১০ জন পেয়েছিল এবার মাত্র ২২৭ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এক লাফে জিপিএ-৫ কমেছে ৪৮৩ জন !
ফলাফলের পরিসংখ্যান বলছে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে কক্সবাজার জেলার ফলাফল বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরতে এই তথ্যই যেন যথেষ্ট।
পাশের হার ও জিপিএ-৫ এর দিক দিয়ে চট্রগ্রাম বোর্ডের শীর্ষ ৩০টি কলেজের মধ্যে ১১তম স্থান অর্জন করেছে কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।এছাড়া জেলায় শতভাগ পাশ দেখিয়েছে রামু ক্যানটন্টম্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ।
রবিবার(২৬ নভেম্বর) দুপুর ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এইচএসসি ২০২৩ সালে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) জেলায় মোট ১৩ হাজার ৪১৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশগ্রহন করে ১৩ হাজার ৩৪৭ জন। আর পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৯ হাজার ৩৯৩ জন।
এবছর পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৫,৮০২ ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ৩ হাজার ৮৫৯ জন এবং ৭৫৪৫ ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ৫ হাজার ৫৩৪ জন। এবছর জেলায় ছাত্রদের পাশের হার ৬৬.৫১%। গতবছর ছিল ৭২.৩৪%। এবছর ছাত্রীদের পাশের হার ৭৩.৩৮%। গতবছর ছিল ৭৭.০৭%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২২৭ জন।তন্মধ্যে ছাত্র ৯৭ জন এবং ছাত্রী ১৩০ জন। গতবছর পেয়েছিল ৭১০ জন। এরমধ্যে ছাত্র ছিল ২৫৫ জন এবং ছাত্রী ছিল ৪৫৫ জন। পাশের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে গত দুইবারের মতো এবারও ছেলেদের অনায়াসেই পেছনে ফেলেছেন মেয়েরা।
এবছর এসএসসি পরীক্ষার ন্যায় উচ্চ মাধ্যমিকেও ছেলেদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে মেয়েরা। এবছর পাশের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে দুটোতেই ছেলেদের পেছনে ফেলেছে মেয়েরা। এছাড়া জেলায় সর্বাধিক ১৫১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে কক্সবাজার সরকারী কলেজ।তবে এ কলেজেই গতবার পেয়েছিল ৪১৬ জন।
বিজ্ঞান বিভাগ
প্রাপ্ত তথ্য মতে,২০২৩ সালে জেলায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১ হাজার ৬২৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৬১৫ জন। যেখানে পাস করেছে ১ হাজার ৩৩৯ জন।পাশের হার ৮২.৯১%।গতবছর ছিল ৮৭.৪৯ শতাংশ।
এবছর বিজ্ঞানে ৬৮৩ জন ছেলের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬৭৮ জন এবং পাশ করেছে ৫৫২ জন। পাশের হার ৮১.৪১%। গতবছর ছিল ৮৭.৬৩ শতাংশ। আর ৯৪৩ জন মেয়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৯৩৭ জন এবং পাশ করেছে ৭৮৭ জন। পাশের হার ৮৩.৯৯%। গতবছর ছিল ৮৭.৩৭%।
এবছর বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১০৯ জন। এর মধ্যে ছেলে পেয়েছে ৫১ জন এবং মেয়ে পেয়েছে ৫৮ জন। গতবছর বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩১১ জন। এর মধ্যে ছেলে পেয়েছিল ১৪০ জন এবং মেয়ে পেয়েছিল ১৭১ জন।
মানবিক বিভাগ
মানবিক বিভাগ থেকে এবছর ৮ হাজার ৩২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮ হাজার ২৮১ জন। যেখানে পাস করেছে ৫ হাজার ৫১৭ জন। পাশের হার ৬৬.৬২%। গতবছর ছিল ৭১.৯৪ শতাংশ।
এবছর মানবিকে ৩ হাজার ৩৯১ জন ছেলের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩ হাজার ৩৭৬ জন এবং পাশ করেছে ২ হাজার ৭০ জন। পাশের হার ৬১.৩১%। গতবছর ছিল ৬৬.৫৪%। আর ৪ হাজার ৯২৯ জন মেয়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪ হাজার ৯০৫ জন এবং পাশ করেছে ৩ হাজার ৪৪৭ জন।পাশের হার ৭০.২৮%। গতবছর ছিল ৭৫.৮৮%।
এবছর মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৫৬ জন। এর মধ্যে ছেলে পেয়েছে ১৮ জন এবং মেয়ে পেয়েছে ৩৮ জন। গতবছর মানবিকে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৯৫ জন। এর মধ্যে ছেলে পেয়েছিল ৫২ জন এবং মেয়ে পেয়েছিল ১৪৩ জন।
বাণিজ্য বিভাগ
বাণিজ্য বিভাগ থেকে এবছর ৩ হাজার ৪৭০ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩ হাজার ৪৫১ জন। যেখানে পাস করেছে ২ হাজার ৫৩৭ জন। পাশের হার ৭৩.৫১%। গতবছর ছিল ৭৫.৬৭ শতাংশ।
এবছর বাণিজ্যে ১ হাজার ৭৫৬ জন ছেলের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৭৪৮ জন এবং পাশ করেছে ১ হাজার ২৩৭ জন। পাশের হার ৭০.৭৭%। গতবছর ছিল ৭৬.৫৭ %। আর ১ হাজার ৭১৪ জন মেয়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৭০৩ জন এবং পাশ করেছে ১ হাজার ৩০০ জন। পাশের হার ৭৬.৩৪। গতবছর ছিল ৭৪.৬৪ %।
এবছর বাণিজ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৬২ জন। এর মধ্যে ছেলে পেয়েছে ২৮ জন এবং মেয়ে পেয়েছে ৩৪ জন। গতবছর বাণিজ্যে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২০৪ জন। এর মধ্যে ছেলে পেয়েছিল ৬৩ জন এবং মেয়ে পেয়েছিল ১৪১ জন।
এবছর জেলার অধিকাংশ কলেজের ফলাফল খারাপ হলেও প্রতিবারের মত এবারও ঈর্ষনীয় সাফল্য পেয়েছে কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।চট্রগ্রাম বোর্ডের শীর্ষ ৩০টি কলেজের মধ্যে ১১তম স্থান অর্জন করেছে জেলার স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানটি।
এবছর এ কলেজ থেকে ১ হাজার ৯৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ১ হাজার ৪১ জন। পাশের হার ৯৫.১৬%। গতবছর ছিল ৯৭.৩৮%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১৫১ জন। যেখানে গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪১৬ জন। এছাড়া জেলায় পাশের শতভাগ সাফল্য দেখিয়েছে রামু ক্যানটন্টম্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহনকারী ২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ জনই পাশ করেছে।
যে ৩ কারণে কমেছে পাস ও জিপিএ-৫
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, তিন কারণে এবার উচ্চ মাধ্যমিকের পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। মহামারি করোনার পর প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আগের বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ছয়টি বিষয়ের দুই পত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর আগের বছর করোনার কারণে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। এ ছাড়া যেসব বিষয়ে পাস ফেল ফলাফল নির্ভর করে সেগুলোতেও শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। বেশির ভাগ বোর্ডে অন্যান্য বিষয়ে যেখানে পাসের হার ৯০ শতাংশের ওপরে সেখানে ইংরেজি, রসায়ন, হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে পাসের হার ৭৯ শতাংশ থেকে ৮৮ শতাংশের মধ্যে। এ ছাড়া এবার যারা পাস করেছে, তারা যখন করোনার সময়ে নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ত। অনলাইনে সে সময়ে ক্লাসের কারণে অনেকেরই ভিত্তি একটু দুর্বল ছিল।
Posted ৩:০১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta